Sunday, December 4, 2016

অপু ধরের একক প্রদর্শণী

পলাশ ভট্টাচার্য্য
Report for Depart Magazine

রাত শেষের স্বপ্নে পাওয়া কয়েকগুচ্ছ দৃশ্য বিশেষ। কিছু কীট-পতঙ্গের স্থবির বসবাস বিছানার চারপাশ। বিছানা থাকলেও দেহখানি নেই, বোধ হয় স্বপ্নের ভেতর হারিয়ে গেছে নিরীহ দেহটি।  অস্পষ্ট আলোয় কীটের দেখা মিললেও দেহের দেখা নেই। আলো-আধারিতে পাতানো বিছানার কাছে যদি কেউ এগুতে যান, হোঁচট খেয়েও পড়তে পারেন। একটু বোধ হয় সতর্কতা জারি করে দেয়  অবোধ নিথর আকারের কীটকুল। এ দেহটির অনুপস্থিতি হয়তো তার নিজের স্বপ্ন দেখাতে চাইছে আমাদের, যাতে কীট-পতঙ্গের পাহারায় আমরাও দেহটির স্বপ্নের সাথে মিশে যায়। বিছানার একপ্রান্তে ভিডিও প্রজেকশনে ভেসে উঠে ইট কাঠ পাথরের দালান কোঠার পাশাপাশি পুকুর আর সবুজ বনানী। বিছানার আরেক প্রান্তের ভিডিওতে সেই অদৃশ্য দেহটির দৃশ্যমান অবয়ব নড়েচড়ে ওঠে। দেহটির মুখাবয়বের নানা ভংগিমা- নিদ্রা, আলস্য, কামনা, অভিমান, অতৃপ্তি, ধৈর্য যেন পালটে দেয় রঙ। তার সাথে পিপড়া সহ কীটের দল তাদের অকেজো অংগ প্রত্যংগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে এই ভিডিও দৃশ্য কল্পে। অদৃশ্য দেহটি ছিল অপু ধরের। তবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে অপুর দেহটি তার অবদমিত মনোভাবের এইসব  সমূহ ভিডিও চিত্রায়ণে। আলো আধাঁরির এমন আয়োজনে অপুকে চিনে নিতে অসুবিধে হয় না। বিছানায় যার অনুপস্থিতি সে ঘুরে ফিরে বার বার ভিডিওগুলোতে ভেসে ওঠে জানান দেয় যে বিছানাটি ছিল তারই।

মধ্যরাত পরবর্তী এমন স্বপ্নময় দৃশ্যাবলীর সমন্বয় ঘটেছিল Alliance Française de Chittagong এ 26th October  - 29th October 2016. এটিই ছিল অপুর প্রথম একক প্রদর্শণী। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করে শিল্পচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন মাধ্যমগত নিরীক্ষায়। যার মধ্যে এই প্রদর্শণীতে শরীরভিত্তিক শিল্পমাধ্যম বা পারফরমেন্সের ভিডিওর সাথে ভাস্কর্যের সংযোগে অপু তার স্বপ্ন, উদবেগ, উত্তেজনার সমন্বয়ে এক রহস্যময় দৃশ্যকল্প নির্মাণ করেছেন।

 কিছুটা ব্যক্তিগত শয়ণ কক্ষের আদলে গ্যালারীতে শিল্পকর্ম স্থাপনা করা হয়েছিলো। যেমন কক্ষের একপাশে  একটা ছোট টেবিল আর চেয়ার বসানো আছে আর টেবিলের উপর মনিটরে সিংগেল চ্যনেল ভিডিও স্থাপন করা হয়। যেখানে অপুকে দেখা যায় এক হাতে আপেল খাওয়া আরেক  হাতে মুট ধরে রাখে  সরলরৈখিকভাবে দুপাশে জলন্ত মোমবাতির মাঝখানটায়। এই পারফরমেনসে অপুর শরীর তীব্র মনোযোগী হয়ে ওঠে আপেল খাওয়ার মাদকতায়। পাশাপাশি গলে গলে মোমবাতির ক্ষরণ সময়কে এগিয়ে নিয়ে যায়।আর আপেলটাও যেন একেকটা দরদী(!) কামড়ে শেষ হয়ে আসে।  অবচেতন আর অবদমনের যে সব পরিস্থিতিকে আমরা স্বীকার করতে এবং স্বীকৃতি দিতে আমাদের চলতি বাস্তবতায় অক্ষম- তাকেই অপু এমন কার্যক্রমের  ভেতর তুলে আনেন এই ভিডিওতে। এছাড়া গ্যালারীর একপ্রান্তে জানালার খোপে আরেকটি পারফরমেন্স ভিডিও ইন্সটল করা হয়। ভিডিওটিতে সাদা আর লালে আবৃত দুটি দেহ ছোট্ট একটি গেরোর সংযোগে ফ্লোরে আঁকিবুঁকি করে করেই চলে। আঁকিবুঁকির পরিমাণ বাড়তে থাকে গ্যালারীর ফ্লোর জুড়ে।

অপুর স্পেসের সমন্বয় ছিলো প্রদর্শণীর উপকরণগুলোতে। মেটালের তৈরী পিপড়ে আর পোকামাকড়ের বিস্তার ছিলো গ্যালারীর মধ্যবর্তী স্পেসে। আলোক স্বল্পতা এবং খালি স্পেসের বন্টন এই প্রদর্শণীর জন্য ছিলো চ্যালেঞ্জিং । আর এই দুটো চ্যালঞ্জিং অংশ অপুর ভিডিওগুলো এবং শিল্পবস্তু গুলোর উপস্থাপণে সম্পূর্ণতা নিয়ে আসে পুরো প্রদর্শণীতে। পরিশেষে, অপুর এই প্রচেষ্টা নতুন কোনো শিল্পভাষার সন্ধান পাবে যেখানে তার ব্যক্তিগত থেকে স্থানিক আর পারিপার্শ্বিক চেতনার ব্যাপক প্রতিফলন ঘটবে।