Saturday, July 30, 2016

প্রসঙ্গ ‘শুনতে কি পাও!’

পলাশ ভট্টাচার্য্য
Publication: Shunte ki pao (Are you listening) raising hope for independent cinema, issue 21 volume 7, July- December 2016, ISSN 2310-6832 DEPART
Translated by Depart Desk

http://www.departmag.com/index.php/en/detail/432/raising-hope-for-independent-cinema
একটি ঘুর্ণিঝড়ের শিকার কিছু মানুষ যারা প্রকৃতির প্রতিকুল অবস্থায় নিজেদের দৈনিক জীবনযাপনে সমর্থ্য প্রকৃতির এত ক্রোধ যারা সায় দিলো না, সেই সব মানুষের যাপিত জীবনের চিত্র  ‘শুনতে কি পাও!’ যেখানে আমাদের সাথে পরিচয়  হলো দেশের একটি প্রান্ত ও সেখানকার কিছু মানুষের সাথে   আর যার মধ্যস্থতায় আমাদের এমন  প্রাণোচ্ছ্বল জীবনের দৃশ্য অভিজ্ঞতা- তিনি এই চিত্রের পরিচালক কামার আহমেদ সাইমন
ভদ্রা নদীর পারে সুন্দরবনের সুতারখালি গ্রাম, যেখানে চার পুরুষের আবাদে ১০০ পরিবারের বসতি এই ছোট্ট গ্রামটির একটি পরিবারের সাথে ছবিতে আমাদের পরিচয় হয়- সৌমেন, তার স্ত্রী রাখি আর তাদের ছয় বছর বয়সের একমাত্র সন্তান রাহুল ২০০৯ এর এক ভয়ঙ্কর জলোচ্ছাস 'আইলা' হানা দিলে পুরো দক্ষিণাঞ্চল ভেসে যায় এরপর শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই আমরা এক  সমন্বিত জীবনযুদ্ধ দেখি ৯০ মিনিটের এই চলচ্ছবিতে
কেমন সময় যাচ্ছিল রাহুল , রাখি ও সৌমেন আর তাদের আশপাশটা্র সংসারে অভাব আর অভাব মোকাবেলায় তাদের চেষ্টার কমতি নেই মাঝে পারিবারিক খুনসুটি চলে, মান অভিমানও  দেখা যায়  একবার ইন্ডিয়া চলে যাবার কথা তোলে রাখি কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায়  সৌমেন এমনটায় বলে, ইন্ডিয়া ভাত কাপড় নিয়ে বসে নেই তাদের জন্য সৌমেন হয়তো আঁচ করতে পারে, যে ভুমিতে তারা প্রকৃ্তি আর তার  চারপাশটার সাথে লড়াই করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে সেখানে ইন্ডিয়া বা এমন কোনো নতুন পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতার চাপ মোকাবেলা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে এখানে স্লো মাইগ্রেশানের  বিষয়টিও আমাদের ভাবায়- স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বিভিন্ন মেয়াদে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের প্রভাব, আর তার সঙ্কটের শিকার দেশের ভিন্ন মতাবলম্বী জনগোষ্ঠিগুলোর দেশ ছাড়ার যে প্রবণতা, তা খানিকটা রাখির ইন্ডিয়া যাবার কথায় সেই ইঙ্গিতটুকু পাওয়া যায় অনিশ্চয়তা আর অভাবের ভেতর এ এক বিরল জীবন যাপন যেখানে থেমে যায়নি হাসি রাখিদের মান-অভিমান সবই থাকে তবে হাসি হারিয়ে যায়নি দেখিরাখির স্বশব্দ অথবা নিশব্দ হাসিমুখ সংসার, স্কুল, পূজা, প্রতিবেশী নিয়েই এগুচ্ছে জীবন সাথে রাহুলের লেখাপড়াও রাখি একজন শিক্ষিতা, সম্ভবত গ্রামের অন্যান্য নারীদের তুলনায় সে অনন্যা এবং কর্মক্ষম রাখিকে বাচ্চাদের পড়াতেও দেখা যায় ছবিতে গ্রামটির শতমানুষের বৈচিত্র্যময় জীবন চর্চা লক্ষ্য করা গেলেও রাখি সেই কেন্দ্রীয় চরিত্র যার সমস্ত উৎসাহ, উদ্দীপনা আর প্রাণশক্তিতে আলাদা অতুলনীয়া
আমাদের এই যাত্রা চলতে থাকে এমনই বিচিত্র কিছু অভিজ্ঞতার সাথে যেমন এম পি আসার আয়োজনটিতে দেখি যেখানে একটি বাঁধ তৈরী করে পুরো নতুন রাস্তা নির্মাণে সফল গ্রামবাসী রাতের ঘুম হারাম করে কত শত মানুষ বস্তা বয়ে পূরণ করেছে খাদ আর সমতল করেছে যাতায়াতের স্থান একটা স্যাঁতস্যাঁতে রঙ্গীন  প্রাণচঞ্চল জীবনের কোলাহল- যেখানে প্রকৃতিকে আবার নতুন ভাবে প্রস্তুত করে নিচ্ছে গ্রামবাসি গ্রামবাসির কষ্ট আর অভিমানের রূপান্তর ঘটলো গল্প, তর্ক আর আড্ডায় ত্রাণ, পানি সরবরাহ, রাস্তা, বাধেঁর সরকারি আশ্বাস থাকলেও সময়তো থেমে থাকে না, আর এই ভরসার উপর বসে নেই কেউইযে যার যার মতো করে  এগিয়ে নিচ্ছে পুরো গ্রামটাকে অনিয়ম আর অভিযোগগুলো কাজের ফাঁকে কথায় কথায় বেরিয়ে আসে অভাব আর দরিদ্রতা এখানে আলাদা হয়ে উঠে কোন এক ব্যক্তির প্রশ্ন তোলে  ক্ষোভ আর তিক্ততার সাথে 'হতদরিদ্র' শব্দটির মানে বোঝানোর জন্য এর সিরিয়াস কোন আভিধানিক অর্থ নিয়ে আলোচনার চেয়ে মানুষের অন্তর্গত মানবিক দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গটি আসে করুণা বা অন্য কোনো ভাবনার  তোয়াক্কা করলো না গ্রামবাসি তাই বোধ হয় official trailer   আগাম বার্তা দিয়ে আমাদের চোখগুলোকে যেন একটু সচেতন করে দেয়  'we all became equel' সেই চায়ের দোকানে আড্ডা জমতে থাকে রাজনৈতিক তর্কে রাষ্ট্র ও ভোটের রাজনৈতিক তর্ক কেমন যেন একটা উচ্ছ্বাস আর উপভোগের ভেতর চলতে থাকে তর্কের স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয়, মনে হচ্ছিল আর কতক্ষণ
আবার বৃষ্টি নামে ভারি বৃষ্টি রাখি সৌ্মেনের পারিবারিক খুনসুটি  চলে কে জানতো এমন সময় বৃষ্টি নামবে দেখতে দেখতে ছবি শেষ হয়ে আসে আর আমরা থেকে যায় সুতারখালিবাসির সাথে জানতে ইচ্ছে করে কেমন আছে তারা কি করছে এখন রাহুল আর তার মা বাবা রাখি-সৌমেন?
এই ছবিটির প্রযোজক ছিলেন সায়মনের স্ত্রী সারা আফরীন ছবিটি মুক্তি পাবার পর এর পরিবেশনা সংক্রান্ত আয়োজনে বেশ কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছিলো যেমন এই ছবি ডকুমেন্টারি নাকি ফিকশন এমন একটা প্রথাসিদ্ধ প্রশ্ন প্রায় সকল দর্শকের ভাবনার কারণ ছিল এছাড়াও এই ছবির পোষ্টার অনেকটা সেই রকম ভাবনাগুলোকে আরেকটু উস্কে দেয় বাংলাদেশের আরবান আর্ট বিশেষ করে রিকশা পেইন্টিংস, সিনেমার ব্যানার, সাইবোর্ড লেখনীর যে ধরণ আর চলচ্চিত্র পরিবেশনা্র যে ঐতিহ্য এই পোষ্টারটিতে তার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
অকাল প্রয়াত তারেক মাসুদ(1956 – 2011) ও ক্যাথরিন মাসুদের মুক্তির গানের (1995) পর বানিজ্যিকভাবে দ্বিতীয় কোন ডকুমেন্টারি হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০১৪  বাংলাদেশে 'শুনতে কি পাও' মুক্তি লাভ করে ও বেশ দর্শক নন্দিতও হয়ে উঠে আর তারেক মাসুদকে উৎসর্গ করেই এই চলচ্চিত্রের জেলায় জেলায় প্রদর্শনীর আয়োজন চলে তারেক মাসুদের মত বাংলাদেশের  চলচ্চিত্রের পূর্বসূরীর অনুপ্রেরণা এই ছবির পরিবেশনাতে একটা বিশেষ ভুমিকা রেখেছ, যিনি (তারেক মাসুদকে) নিজের ছবি প্রদর্শনীর জন্য প্রজেক্টর আর তার অন্যান্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছিলেন জেলা থেকে জেলায় 'শুনতে কি পাও' এর প্রদর্শনী ঢাকার বাইরেও বেশ সাড়া জাগায় বিশেষ করে চট্টগ্রামের শিল্পকলায একাডেমীতে বিপুল সংখ্যক দর্শকের সাড়া পাওয়া যায়  ২০১২ এর ২৯শে অক্টোবরে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন প্রামাণ্য উৎসব 55th DOK Leipzig 2012, Germany তে 'উদ্বোধনী ছবির' আমন্ত্রণ পেয়ে ছবিটি প্রথম আলোচনায় আসে পরে ধাপে ধাপে ২০১৩তে 35th Cinéma du Réel Best Feature-Length Documentaryর জন্য ‘Grand Prix’ পুরস্কার, Mumbai International Film Festival (MIFF) 2014, India তে Golden Conch for Best Documentary Best Cinematography  Award সহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক পু্রস্কার ও উৎসবে সমাদৃত হয়  ভিন্ন এক সুর 'শুনতে কি পাও!' সবই আছে ছবিতে, তবে ভিন্নভাবে বা ভিন্ন বৈচিত্র্যে বিশ্ববাসি এই সময়ে হয়তো বাংলাদেশের প্রাকৃ্তিক দূর্যোগ, দরিদ্রতা আর রাজনৈতিক সহিংসতার সহজ সরলীকরণ থকে কিছুটা হলেও সচেতন হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হবে হাজার হাজার টেলিভিশন চ্যানেল, ট্যাবয়েড, জার্নালের তথ্য আর তার বিভ্রান্তির ভারে ভারাক্রান্ত যখন পৃথিবী, তখন এমন কেউ সাড়া তোলে কিছু শোনানোর জন্য শুনতে কি পাও একটা অনুভব বা উপলব্ধির শব্দ আর দৃশ্যপ্রকল্প
ফিরে আসি ডকুমেন্টারি বা ফিকশনে- তর্কটি নির্মাতা দম্পতি আনন্দের সাথে নিয়েছেন এবং দুজনেই সহমত পোষণ করেছেন এই ব্যাপারেশুনতে কি পাও একটি চলচ্চিত্র' নির্মান কাজ শুরুর সময় ডকুমেন্টারি বা ফিকশন বানাবার চিন্তা বাদ দিয়েই শুধু একটি চলচ্চিত্র বানানোর কথাই তারা ভেবেছিলেন যার  ফলশ্রুতিতে আজকের এই ছবি
  চলচ্চিত্রের  প্রচলিত ধরণ বা জ্যাঁর গুলো কিছুটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এখানে যদিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেশুনতে কি পাও!’র ধরণ Cinéma vérité বা Direct Cinema থেকে  অনুপ্রানিত বলে বিবেচনা করা হচ্ছে নৃ্তাত্ত্বিক আর সমাজ বিজ্ঞানীরা Cinéma vérité বা observational cinema   কাজ শুরু করেন ফ্রান্সে যার একটা উদ্যোগ ছিলো তথ্য ও কাহিনীচিত্রের মাঝামাঝি একটা আঙ্গিক নিয়ে নিরীক্ষা এই ঘরানার শিল্পীরা অনেকটা Dziga Vertov এর নিউজ রিল সিরিজ (একটি বিশেষ শর্ট ডকুমেন্টারীর ফর্ম) ২০দশকের Kino-Pravda ("Film Truth")যেখানে দৈনিক জীবন যাপনের অভিজ্ঞতার উপর আলোকপাত করে কোন অনুমুতি ছাড়াই বিভিন্ন কায়দায় চিত্রধারণ করতেন মার্কেট, স্কুল, বার প্রভৃতি স্থানে, এক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে লুকানো ক্যামেরাও ব্যবহার করতেন আর পাশাপাশি Robert Flahertyর চলচ্চিত্র দ্বারাও অনুপ্রানিত হয়েছিলেন এই ঘরানার শিল্পীরা অবশ্য Robert Flahertyর কথিত Feature-length documentary- Nanook of the North (1922) আর Kino-Pravda সিরিজ প্রায় সমসাময়িক ঘটনা এ দুটোর ঘটনার সমন্বয়ে Cinéma vérité র ক্যামেরাকে ব্যবহার করা হয় সত্য উন্মোচনে বা এমন কিছু বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয় যাতে চলমান বাস্তবতার ভেতর লুকিয়ে থাকা আরও কঠিন কোন সত্যকে উপলদ্ধি করা যায় Jean Rouch (1917- 2004)Pierre Perrault(1927–1999) এর মত French নৃ্তাত্ত্বিক ও চলচ্চিত্রকারেরা এই আঙ্গিকের প্রবক্তা Wolf Koenig আর Roman Kroitor এর Lonely Boy (১৯৬২) Chris Marker এর Le joli mai (1963) প্রভৃতি চলচ্চিত্রে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় আর Direct Cinema, Cinéma vérité আন্দোলনেরই একটি আমেরিকান সংস্করণ সামান্য ভিন্নতা থাকলেও এই ঘরানার বৈশিষ্ট্য প্রায় Cinéma vérité মতই Cinéma vérité র চাইতে Direct Cinema অনেক বেশী যথাযত ছিল যেখানে ক্যামেরা খুব observational role পালন করতো আর ছবিগুলোতে অনেকটা unbiased feel লক্ষ্য করা যায় এক্ষেত্রে ক্যমেরা হলো বাস্তবতার নীরব সাক্ষী শুনতে কি পাও' নৃ্তাত্ত্বিক ছবি হিসেবে ইতিমধ্যে দেশের বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায় আলোচিত হয়েছে  আমরা শুনতে কি পাও ছবিতে ক্যামেরাকে ঘরোয়া কায়দায় কাজ করতে দেখি আপতদৃষ্টিতে Direct Cinema বা Cinéma vérité দুটোর চরিত্র লক্ষ্য করা গেলেও অন্তত আমাদের কাছে বা আমাদের দর্শকদের কাছে এই ছবির এখনো পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট  ধরণ বা জ্যাঁর নিয়ে খুব আলোচিত হয়নি তবে ছবিটির নতুন কিছু সম্ভাবনা দেখা যায় যেখানে ঘরোয়া আবেশে স্বতঃস্ফুর্তভাবে বাস্তবতা একটা কাহিনীর আকার ধারণ করেছেক্যামেরা এখানে সুবোধ, শান্ত আবার ক্যামেরা সাধারণ shaky বা নড়ে চড়ে ওঠে যা বস্তুগুলোর সক্রিয়তা সম্পর্কে দর্শকের দৃষ্টিকে আরো বেশী  অনুপ্রাণিত করে  আর কোন রকম নির্দেশণাসূচক বা হুকুম মোতাবেক দৃশ্য ধারণের চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়নি  ক্যামেরার লক্ষ্যবস্তুগুলো প্রায় বরাবরই যে যার মতো ব্যস্ত সত্যকে এমন এক নাটুকে প্রক্রিয়ায় হাজির হলো যে কিছু যন্ত্রের অনুসরণে কোন বস্তুর আড়ষ্টতা এখানে ধরা পড়েনি যা Dziga Vertovদের Kino-Pravda ("Film Truth")এবং তার পরবর্তী Cinéma vérité বা Direct Cinema থেকে এক্ষেত্রে অনেকাংশে ভিন্ন। Primary (1960)ছবিতে তার আমরা বারতি শব্দ সংযোগ লক্ষ্য করি, যেখানে ছবিটির টাইটেল থেকে শুরু করে ছবির নানা অংশে মিউজিক আর ধারাবর্ণনা ব্যবহার করা হয় আর ছবিটির পুরো ঘটনাটির কেন্দ্র ছিল John F. Kennedy আর Hubert Humphrey মধ্যে নির্বাচন এছাড়া Lonely Boy (১৯৬২) শিল্পী Paul Ankaর মিউজিক্যাল ক্যারিয়ার নিয়েই ছবিটি নির্মিত যা তার এলবাম Lonely Boy র নামেই নামকরণ, এটিও অনুরুপ মিউজিক্যাল আর পাশাপাশি অনেকটা ছবিটি ইন্টারভিউ ভিত্তিক। এদিক থেকে 'শুনতে কি পাও' তে অতটা সংযুক্তি নেই, শব্দ আর সঙ্গীত এখানে প্রায় অর্গানিক, শুধু রেডিওর বার্তাটা না হলেও চলতো। আর কোন ইন্টারভিউ এখানে নেই।  আমরা একটি মিউজিক্যাল ট্যুর নিয়ে নির্মিত D. A. Pennebaker এর Don't Look Back(1967), Robert Drew প্রযোজিত Richard Leacock আর Albert Maysle তোলা ১৯৬০ র  Wisconsin Primary election নিয়ে ছবি Primary তে Direct Cinema র শর্তগুলো লক্ষ্য করিএই ঘরানাগুলো কিছুটা আবার ৫০ এর দশকের  British free cinema সাথেও কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়, যার প্রথমদিকের একটি প্রকল্প Lindsay Anderson এর O Dreamland(১৯৫৩) Cinéma vérité বা Direct Cinema, Europe র পঞ্চাশ আর ষাটের দশকের নিরীক্ষাধর্মী আঙ্গিক হলেও দুটিই আজকের সময়ের তুলনায় পুরোনো বিশেষ করে এই সব ঘরানার  চারিত্রিক ধরণগুলোর কিছু প্রচলিত ডকুমেনটারির বা সেই সময়কার চলতি  চলচ্চিত্র চর্চার কিছু Fundamentals Roll ছিল যেমন সংবাদচিত্রের আদল বা এই সময়ের live broadcastingএর কিছুটা আমেজ,  Handheld camera য় দৃশ্যধারণ, ছবির content র সাথে পলিটিক্স ও নৃ্তাত্ত্বিক বা সমাজতাত্ত্বিক চিন্তার নানা প্রসঙ্গগুলোকে যোগ করার চেষ্টা, সেই সময়কার চলতি সম্পাদনার কলা কানুন cut to, dessolve, jump cut ইত্যাদি বিষয় গুলো লক্ষ্য করা যায়   এই ক্ষেত্রে 'শুনতে কি পাও' র জ্যাঁরকে খুব সরাসরি Cinéma vérité বা Direct Cinemaর মধ্যে না ফেলে, আমরা আজকের সময় আর বাস্তবতার ভিত্তিতে এর সার্থকতা নিয়ে ভাবতে পারি Indonesian killings of 1965–66 নিয়ে সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত Joshua Oppenheimer এর The Act of Killing (২০১২) ছবিটিও তার জ্যার নিয়ে আলোচনায় এসেছে ছবিটিতে আনোয়ার কঙ্গো নামে একজন হত্যাকারীর নিজের তৈরী করা এক অভিনব নাটুকে বর্ণনায় সেই ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে।  Joshuaর দেয়া The  Act of Killing প্রসঙ্গে (By Nicolas Rapold on July 15, 2013) এক সাক্ষাৎকার থেকে আমরা তার ছবি সম্পর্কে নিজের মতামতের সামান্য অংশ তুলে আনতে পারি-
"What observational documentarians do—especially of the American direct cinema variety—is to set up conditions that are quite different. I deliberately don’t use the word cinéma vérité because cinéma vérité was a term coined around Jean Rouch’s work. In direct cinema—the Maysles Brothers, Wiseman—the premise is to create a reality with characters which simulates a preexisting reality. You create a reality that looks as if there’s no camera filming it. And that in fact is a very complicated thing to do—and it’s a rather arbitrary thing to do, and not necessarily the most insightful thing to do, although there are masterworks of direct cinema. But it is a charade. We’re actually creating the illusion of documenting a reality. So if it’s the case that, if I start filming you now, you’re going to start thinking “how do I look,” then filmmaking is a fantastic opportunity to explore the conditions of imagination that underpin our behavior"
http://www.filmcomment.com/entry/interview-joshua-oppenheimer-the-act-of-killing

শুনতে কি পাও!’ তে অতিরিক্ত শব্দ সংযোগ বিশেষ করে সঙ্গীত, মনোলগ, ধারা বর্ণনা,  সাক্ষাৎকার প্রভৃতি উপাদাগুলোর  আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা ছাড়া সরাসরি বাস্তবতাকে ফ্রেমে নিয়ে আসার চিন্তা অনেকাংশে নতুন প্রামাণ্যচিত্রের তকমা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে না যেখানে থাকে কিছু জীবন চর্চার সত্যবস্তু যা কোন রকম জ্যাঁর এর আবরণের চেয়ে অনেক বেশী স্পর্শকাতর আবার প্রামান্যচিত্রও সঙ্গত হয়ে ওঠে, অনুভূত হয় John Grierson র প্রামান্যচিত্রের মর্মার্থ 'creative treatment of actuality' 
সাইমন নিজেই এই ছবির চিত্রগ্রাহক ছিলেন - এখানেও ভিন্ন বৈচিত্র্য আমরা দেখতে পাই ক্যামেরায় দিনের পর দিন মাসের পর মাস চোখ রেখে পর্যবেক্ষণ করেছেল গ্রামের সেই মানুষগুলোকে সম্ভবত দু বছর টানা যাওয়া আসার মাধ্যমে এই চিত্রগ্রহন করা হয়েছেসেখানকার মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনের আরেকটি অংশ হিসেবে নিজের এই কাজটিকে সেখানে গ্রহনযোগ্য করে তুলেছেন আরো লক্ষ্য করা যায় চিত্রগ্রহনে তার কিছু পূর্ব অভিজ্ঞতা আর জ্ঞানের প্রতিফলন যেমন বিশাল এক প্রান্ত জুড়ে প্রচুর মানুষের অবস্থান, দেখে মনে বিভান্তি জাগে কি ঘটছিলো ওখানে ! আর একটু পড়েই বিভ্রান্তি কেটে যায় দেখা যায় এই মানুষ গুলো একটা ফুটবল খেলার দর্শক খেলা শেষে আনন্দ আর গানে মেতে উঠলো সকলে এই লং শটের দৃশ্যটি এতটাই আকর্ষনীয় যেখানে আলো আর রঙ কোনো এক কৌতুহলদ্দীপক প্রশ্ন তৈরী করে এই  লং শটের স্থায়িত্বকালে- কি ঘটছে বা ঘটবে এমন কিছু কৌতুহল তৈরী করে দেয় এখানে তাঁর ক্যামেরার অবস্থানকেন্দ্রটি বেশ সচেতন ছিল ছবির সম্পাদনার কাজটিও বেশ ছন্দময়  করে তুলেছেন সৈকত শেখরেশ্বর রায়- অনুভূত হয় এমনটাক্যামেরা, রাখি, সৌ্মেন ও রাহুল আর গ্রামবাসি
সঙ্গত কেনই বা শুনতে কি পাও আজ আলোচিত? স্বাধীনত্তোর আমরা যে ক'টি চলচ্চিত্র পেয়েছিলাম, তা সাময়িক একটা চাহিদার যোগান দিলেও আজ দেশের ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি নানা কারণে সঙ্কটের মুখে দিন দিন দেশের সিনেমা হলগুলো এক এক করে বন্ধ হতে চলেছে সেই চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান থেকে শুরু করে একে একে আলমগীর কবীর, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর -যাদের শ্রম একটা সম্ভাবনার পথ দেখিয়ে ছিলো, তা কিছু হয়ে উঠার আগেই তাঁরা হারিয়ে গেছেনএকটা শিল্পভাষা, একটা নতুন আঙ্গিক অথবা এমন নতুন কোনো নিরীক্ষার সাহস কেই বা নিতে পারে? কি করেই বা উৎসাহিত করা যাবে এতসব নতুন চিন্তা বা প্রকল্পগুলোকে? এত কিছু বাস্তবায়িত করতে কারাই বা এগিয়ে আসবেন দায়িত্ত্ব নিয়ে? আরো  নানামুখী প্রশ্ন হাজির হতে পারে এইসব প্রশ্নে নানারকম প্রতিক্রিয়া হতে পারে তবে এক্ষেত্রে অতটা অনিশ্চয়তার খুব একটা আশঙ্কা নেই সময় সম্ভাবনা এই দুই পাল্টাচ্ছে, ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি বা পৃষ্টপোষতার জন্য কেউ তেমটা বসে নেই বিকল্প নানামুখী চিন্তা আর আয়োজন ধীরে ধীরে এগুচ্ছে ডিজিটাল টেকনোলজিতে ছোট হয়ে আসা ছবি তোলার সরঞ্জামাদি, সস্তা যন্ত্রপাতি দিয়েই দেশের ভেতরে প্রস্তুতি চলছে সৃষ্টিশীল তরুণদের টেকনোলজির কল্যানে সহজে ক্যামেরা পৌছে যাচ্ছে প্রান্ত থেকে প্রান্তে এই প্রচেষ্টার ফলে কিছুটা হলেও নতুন কোন সম্ভাবনার আশা থাকে 'শুনতে কি পাও!' হলো সেই এক সম্ভাবনা যেখানে নতুন ভাষা খোঁজার বিকল্প চেষ্টা করা হয়েছেপূর্বেকার চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ক'টাতেই বা দেশের প্রান্ত আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বা সংখ্যগুরুর বাইরে ভিন্নমতাবম্বীদের ভিন্ন ভাবনা আর যাপিত জীবন উঠে এসেছে সে সব মানুষগুলোর ভিন্নতা কেবল জাতিগত ভিন্নতাই নয়, তাদের দীর্ঘদিনের যে অভ্যস্ততা, সাহস আর মানবিক ঐক্য একটা  সভ্যতার অংশ দেশে সাধারন জাতিয় ও ধর্মীয় পরিচয়ের গভীরে আরও কত বৈচিত্র্য, কত তথ্য আর সভ্যতা লুকিয়ে আছে তার ভেতরে আমরা ক'জনেইবা গিয়েছি
স্বদেশের দূর্যোগ কবলিত স্যঁতস্যতেঁ দৃশ্য আর এর ভেতরে যে রঙীন সুস্থ সুন্দর জীবনবোধ তার এমন বিকল্প চিত্রায়ন সত্যিই আলাদা এখানে চলচ্চিত্রের কলাকানুনের পাশাপাশি দার্শনিক যে গুরুত্ব সেটাও উপলব্ধি করা যায় যেখানে এমন মনে হতে পারে একটা জনগোষ্ঠী তাদের কঠিন জীবন চর্চার ভেতরে একটা নীরব দর্শন চর্চা  করে যাচ্ছে মাটি ও মানুষের মধ্যে যে পারস্পারিক বোঝাপড়া তা এই জীবন চর্চারও ঊর্দ্ধে এছাড়াও জীবন অনেক সঙ্গীতময় ছবিতে অনেক শক্ত কাজের ফাঁকে কোরাসে ভাটিয়ালি গান শোনা যায় অনুভব করি আমাদের জীবন মাটিতে, কর্মে, শ্রমে, আর সঙ্গীতে
আবার এমনটাও নয় সব আশার কেন্দ্র শুধু শুনতে কি পাও! এটা একটা আইডিয়া যার নিরীক্ষার মাধ্যমে স্বদেশের শিল্পভাষার/সিনেমার ভাষার একটা নতুন মাত্রা যোগ হল। আমরা এমন অনেক বিকল্প আইডিয়ার সন্ধান সামনের দিনগুলোতে পাবো- 'শুনতে কি পাও' অন্তত এইটুকু বিশ্বাসকে অনুপ্রাণিত করার দাবি রাখে।
পরিশেষে 'শুনতে কি পাও' একটা জাগতিক ব্যাপার গভীর বাস্তবতার পরিচিতি একটা বিশেষ ধারণার প্রতিরূপ আর জীবনবোধের কিছু সাধারন উপাদানের সফল সমন্বয় আশা রাখতে পারি ভবিষ্যত এমন আরো চলচ্চিত্রের জন্য, যেখানে দর্শকের সাথে ছবির আর ছবির সাথে জীবনের একটা বিকল্প সংযোগ সৃষ্টি হবে এক্ষেত্রে প্রখ্যাত রুশ চলচ্চিত্রকার Andrei Tarkovsky র একটা কথা পরামর্শ টানা যায়-
Never try to convey your idea to the audience - it is a thankless and senseless task. Show them life, and they’ll find within themselves the means to assess and appreciate it.”